Dialectical Behavior Therapy (DBT)

ডায়ালেক্টিকাল বিহেভিয়ার থেরাপি (Dialectical Behavior Therapy বা DBT) একটি প্রমাণভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য থেরাপি, যা বিশেষভাবে আবেগ নিয়ন্ত্রণ, সম্পর্ক উন্নয়ন এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ১৯৮০-এর দশকে ড. মার্শা লিনেহান এই থেরাপিটি বিকাশ করেন, বিশেষ করে বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (BPD) এর চিকিৎসার জন্য। সময়ের সাথে সাথে DBT বিভিন্ন মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে।

 

ডায়ালেক্টিকাল বিহেভিয়ার থেরাপি (DBT) কী?

DBT মূলত কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপির (CBT) একটি বিশেষায়িত রূপ। এটি দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের উপর ভিত্তি করে কাজ করে
 

১:ডায়ালেক্টিক্স: ডায়ালেক্টিক্স হলো দুটি বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ভারসাম্য খোঁজার পদ্ধতি। DBT তে এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয় আবেগ ও যুক্তির মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে।


২:বিহেভিয়ার থেরাপি: এটি এমন আচরণগত কৌশল শিখতে সাহায্য করে, যা নেতিবাচক আচরণ ও অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

DBT চারটি মূল দক্ষতার (skills) উপর গুরুত্ব দেয়:

  • মাইন্ডফুলনেস(Mindfulness): বর্তমান মুহূর্তে থাকার ক্ষমতা।
  • স্ট্রেস টলারেন্স(Stress tolerance): চাপ ও কঠিন পরিস্থিতি সহ্য করার কৌশল।
  • ইন্টারপার্সোনাল ইফেক্টিভনেস(Interpersonal Effectiveness): সম্পর্কের মধ্যে সম্মানজনক ও কার্যকরী যোগাযোগ।
  • ইমোশন রেগুলেশন(Emotion Regulation): আবেগের প্রভাবিত হওয়া কমানো এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা।

 

কেন ডায়ালেক্টিকাল বিহেভিয়ার থেরাপি (DBT) গুরুত্বপূর্ণ?

DBT শুধুমাত্র মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে নয়, বরং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক। এটি বিশেষত এমন ব্যক্তিদের জন্য কার্যকর, যারা:

  • তীব্র আবেগগত সমস্যার সম্মুখীন হন।
  • আত্মঘাতী চিন্তা বা আচরণ প্রদর্শন করেন।
  • ক্ষতিকারক আচরণের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষতি করেন (self-harm)।
  • সম্পর্কের ক্ষেত্রে জটিলতায় ভুগছেন।

DBT মানসিক সমস্যার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকরী, যেমন:

  • বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (BPD)
  • আত্মহত্যার প্রবণতা
  • ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটি
  • খাদ্যাভ্যাসজনিত সমস্যা (Eating Disorders)
  • PTSD (Post-Traumatic Stress Disorder)
  • মাদকাসক্তি (Substance Use Disorders)

DBT এর সেশন কেমন হয়?

DBT থেরাপি সাধারণত চারটি উপায়ে পরিচালিত হয়:

  1. ব্যক্তিগত থেরাপি (Individual Therapy):
    ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী কৌশলগত থেরাপি দেওয়া হয়।

  2. গ্রুপ থেরাপি:
    একটি দলগত পরিবেশে চারটি মূল দক্ষতা শেখানো হয়।

  3. টেলিফোন কোচিং:
    তীব্র সংকট মুহূর্তে থেরাপিস্টের কাছ থেকে ফোনে সহায়তা।

  4. কনসালটেশন টিম:
    থেরাপিস্টদের মধ্যে একটি দল, যারা ক্লায়েন্টদের সেবা আরও উন্নত করতে কাজ করেন।

 

ডায়ালেক্টিকাল বিহেভিয়ার থেরাপি একটি শক্তিশালী ও কার্যকর থেরাপি পদ্ধতি, যা মানসিক স্থিতিশীলতা এবং জীবনের গুণগত মান বাড়াতে সাহায্য করে। এটি কেবল মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসায় নয়, বরং ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে ভারসাম্য আনতেও কার্যকর। যদি আপনি বা আপনার প্রিয়জন আবেগ নিয়ন্ত্রণ বা সম্পর্কের জটিলতায় ভুগে থাকেন, তাহলে ডায়ালেক্টিকাল বিহেভিয়ার থেরাপি(DBT) একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে।

 

Post a Comment

2 Comments